রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৩

রামায়ণ আধুনিক ভাবধারায়

রামায়ণ নিয়ে একটু চিন্তা করছিলাম যে আজকের মডার্ণ যুগে যদি রামায়ন লেখা হত  তবে কি রাবনের দশটা মাথা থাকত। সে ভাবে এই লেখাটা সুরু করেছিলাম আর স্মাশয়ার্ডের হাতে দিয়ে ই-বুক বানিয়ে দিয়েছিলাম। পরে আসতে আসতে পরের কান্ড গুলো লেখা শুরু করার সময় আগে যে সমস্ত ভুল করেছিলাম সে গুলোকে ঠিক করে ক্রমাগত এগুলো পোষ্ট কর যাব। পরে একসাথে পথি ডট কম থেকে পিডিএফ ফর্মে বার করার ইচ্ছে আছে।
বাল কান্ডের মধ্যে বিশেষ কিছু বদল করার পাইনি তাই একেবারে অয্যোধ্যা কান্ডের থেকে শুরু করছি।


রামের বনবাস ছবি তোলা হবে। পরিচালক হরি মুশা মহাশয়, চোপড়াজীর পুরোন রামায়ণ সিরিয়াল কম করে ছ'-সাত বার দেখেছেন। আর একটা মুল চিন্তা মাথায় এনেছেন। কিন্তু সেই সিরিয়াল তৈরি হবার পর, অনেকদিন হয়ে গেছে। সমাজের চিন্তা অনেক বদলে গেছে

কাজেই এটা তার মাথায় আছে যে ঐ ধরনের সিন দিলে ছবি ফ্লপ হবে আর তার মানে খুব খারাপ। বাজার যাবে, কেউই আর তাঁকে ছবি করতে ডাকবে না। তিনি অনেক ভেবে ঠিক করলেন সমস্ত পাত্র পাত্রীকে যদি আজকের দিনের করে দর্শকদের কাছে আনা যায় তবে হয়তো তাদের সেটা পছন্দ হবে। লেখক পাওয়া দুর্ঘট হল কেননা কেউই এই সাহস দেখাতে রাজী হচ্ছেন না। অগত্যা তিনি নিজেই সিন লিখতে শুরু করে দিলেন।

প্রথম দৃশ্যে দশরথ নার্সিং হোমের বেডে শুয়ে আছেন। বেডের পাশে অক্সিজেন সিলিন্ডার, স্যালাইনের বোতল, ডায়ালিসিসের মেশিন দেখা যাচ্ছে। মাথার কাছে কার্ডিও মনিটর। মুখে মাস্ক পরে কৌশল্যা আর কৈকেয়ী দেখা করতে এসেছেভিসিটিং আওয়ার শেষ, নার্সের তাড়া খেয়ে ওনারা বাইরের দিকে রওয়ানা দিচ্ছেম। হঠাত কৈকেয়ী পেছন দিকে ফিরলেন। কৈকেয়ীর সাজ একটু উগ্র ধরণের। পরণে মিনি স্কার্ট আর উপর টপ, নার্সিংহোম হলেও তিনি মেকআপের ত্রুটী রাখেন নি।

"তোমরা এগিয়ে যাও। আমি একটু আবার গায়ে হাত বুলিয়েই আসছি।"

কৌশল্যা র গলা, -

"আমরণ, আদিখ্যেতা দেখ না, বাড়ি নিয়ে যাই, তখন গায়ে হাত বুলিয়ে নিস মন ভরে।"

ততক্ষনে কৈকেয়ী দশরথের কাছে পৌঁছে গেছে। একটা হাত দিয়ে দশরথের হাত ধরে মুখটা কানের কাছে নিয়ে কি জানি বলতে লাগলো। দশরথ কথা গুলো শুনছেন আর তার মুখটা ক্রমশ কি রকম হয়ে যেতে শুরু করল। শেষে কৈকেয়ীর পিঠে হাত রেখে বলে উঠলেন

'সেটা কি করে হবে?'

কৈকেয়ী বলে উঠলেন

" না বলবে নাআগে তো আমাকে তুমি কথা দিয়েছিলে। এখন না বলছ কেন?"

দশরথ বলে উঠলেন"

এখন তো যাও। আমি দেখছি কি করে করব এটা।"

পরের দিন। দশরথের বেডের পাশে খালি কৌশল্যা।

"বড় বউ, শোন আমার উইলটাকে একটু বদলাতে হবে, উকিল দিয়ে ওটাকে ঠিক করার আগে  তুমি একটু শুনে নাও।"

"এখন আবার উইলের কথা কেন? ঠিকই হয়ে উঠছ। বাড়ী নিয়ে যাই তখন ওসব হবে।"

না, না। আগে শোন তো।

বল, শুনছি।"।

"রামুকে (রাম) প্রমোশন দিয়ে সিংহাসনে বসাচ্ছি না। ওখানে ভুতু (ভরত) বসুক। দক্ষিনের জঙ্গল মহল থেকে ঠিক মত আদায় আসছে না। রামু গিয়ে ওখানে সব ঠিক করুক।"

"সে কি কথা বলছ। কাল রামুকে রাজপুত্র থেকে রাজার প্রমোশন দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করে দিয়েছ। এখন লোকে কি বলবে। তাছাড়া রামু লখুর চেয়ে সিনিয়র। সিনিয়রকে বাদ দিয়ে ভুতুকে প্রমোশন দিলে রামুই বা কিভাবে সেটা নেবে।"

না, বড়বউ, না তুমি যা বলছ ঠিক, কিন্তু আমি যে মেজবউকে কথা দিয়েছি। মাঝে ওদের বাড়ী থেকে অনেক হেল্প এসেছে। এখন ওর জন্য ওটুকু করতে বারণ করবে না। "

“ঠিক আছে, তুমি যখন ঠিকই করে ফেলেছ তখন আমার হ্যাঁ না বলার কোন মানে হয় না। কথাটা তুমি নিজেই রামুকে বলে দিও। নীচে দাড়িয়ে আছে, পাঠিয়ে দিচ্ছি"

কৌশল্যার প্রস্থান। কিছুক্ষন বাদে রামুর প্রবেশ।

" প্রণাম বাবা। আপনি আমায় ডেকেছেন?"

"হ্যারে বাবা। তোকে একটা কাজ করতে হবে। তুই এখুনি জঙ্গলমহলে চলে যা। কাল প্রমোশনের প্রোগ্রামটাতে একটু চেঞ্জ করেছি। ভুতুকে প্রমোশন দিচ্ছি। তোর মেজমা বলছিল জঙ্গল মহলের জন্য তুইই উপযুক্ত লোক"।

"ঠিক আছে। তুমি বলছ যখন, হয়ে যাবে। এটা এমন কিছু প্রবলেম না।"

রামুর প্রস্থান। দশরথ পাশ ফিরে শুয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। চোখের কোনাতে জল।

রেগে লখুর প্রবেশ। বেশ উত্তেজিত স্বরে—

" বাবা, এটা কি শুনছি। দাদার বদলে তুমি ভুতুকে প্রমোশন দিচ্ছ। দাদা নাকি জঙ্গল মহলে যাচ্ছে। ওখানে একটা ভাল হোটেল পর্সন্ত নেই। তার কি হবে? এখানে একা পড়ে থাকবে? না, না, কিছুতেই সম্ভব নয়। তোমার বদনাম হয়ে যাবে। দাদা তো তোমার কথা শুনে দুঃখ করছিল। আমি ওকে আটকাচ্ছি।"

"না রে লখু। আমি তোর মেজমাকে কথা দিয়েছি। রামুকে সে খুব ভালবাসে, কিন্তু চায় যে ভুতু প্রমোশন পায়”

"বুঝেছি কে ব্যপারটা ঘটিয়েছে। যাচ্ছি আমি ঠিক করতে"

রেগে লখুর প্রস্থান।

কাট

কৈকেয়ীর ঘরশালোয়ার কামিজ পরণে মান্তু (মন্থরা) ঝুকে ঝুকে টেবিলের ঢাকাটাকে ঝাড়ছে, ভেতর থেকে কৈকেয়ীর গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। মন্থরার হাতে ওয়াকিং স্টিক প্যাটার্ণের ক্রাচ লাগান আছে তার সাপোর্টের জন্য। প্রচন্ড রেগে লখুর প্রবেশ। ঢোকার সময় মন্থরার সাথে ধাক্কা লাগার থেকে কোন রকমে বেঁচে যায়।

“মেজমা, এটা কি শুনছি। বাবাকে নাকি তুমি দাদার প্রমোশন দিতে বারন করেছ। তোমার কি পাগলামী করার আর কোন সময় ছিল না। কাল সবার সামনে প্রমোশনের প্রোগ্রাম আছে আর আজকে দাদাকে জঙ্গল মহলে পাঠাচ্ছ”।

“কার মাথায় এ বুদ্ধির জন্ম হয়েছে। নিশ্চয় ঐ লেংড়ি মান্তুরএকদিকে তো আগেই বেকে রয়েছে, আমি এবার মেরে ওকে আর একটু বেকিয়ে দেব যাতে হাতপা একসাথে চালিয়ে চার হাত-পায়ে এগোতে হয়। “

ওরে থাম। বড় হয়েছিস, কিন্তু ঘটে একফটা বুদ্ধি হয় নি। দাদা, দাদা করে দাদার ল্যাজ হয়ে থাকলে কি তোর পাখা গজাবে? মান্তু তো ঠিকই বলেছে।।“

“থাকো তুমি তোমার মান্তুকে নিয়ে আর ভাবতে থাকো ভুতুকে প্রমোশন দেয়াচ্ছ। আমি চললাম দাদার সাথে”।

লখুর প্রস্থান।

রামুর ঘর। রামু একটু উত্তেজিত অবস্থাতে ঘরে পায়চারী করছে। মাঝে মাঝে তার মতে দরকারে লাগবে এমন জিনিষ বার কর বুছানার উপরে ফেলছে। সীতা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

“দেখছ কি? জিনিষ গুলো আমার স্ট্রলীতে ভরে দাও। কবে ফিরব তো জানিনা। বাবাটা কি? দিলে সব ক্যাচাইন করে। ভুতুকে প্রমোশন আর আমাকে জঙ্গল মহল”

“আর ফিরেই বা কি হবে? ওখানে গিয়ে একটা ভাল দেখে থাকার জায়গা ঠিক করে তোমায় নিয়ে যেতে হবে।  কোম্পানীতে আর আমার কোন ভবিষ্যত নেই। ভুতু কি করবে ঠিক নেই আর তার পরে আমাকে চার্জ দেবে?”

“ তার মানে? তুমি একা যাবে? আর আমি এখানে কি করব? আমি না থাকলে পরে ওনার তো খুব সুবিধা হয় নতুন একটা কাউকে নিয়ে থাকতে পারেন।“

“আরে না না। ওখানে সব কিছুই নতুন। তোমার হেল্পিং হ্যান্ড হিসাবে যে কাকে পাব তাও জানি না। আগে সব ঠিক করে নিই তার পরা তোমার যাওয়া।  ওখানে একটা ভাল হোটেল পর্যন্ত নেই।“

“না থাক। তুমি যেখানে থাকতে পারবে সেখানে আমিও পারি। আর তোমাকে কি সত্যিই যেতে হবে। না গেলে কি হবে?”

“কি বলছ? বাবা বলেছেন

হ্যাঁ। হ্যাঁ। উনি নিজেই নিজের কথা রাখেন না, তো অন্য কেন রাখবে। উনি না বলেছিলেন যে তোমাকে প্রমোশন দেবেন। আমি তোমার সাথে যাচ্ছি।‘

“শোবে কোথায়?

“কেন তুমি যেখানে।“

“আমি তো যেখানে সেখানে শুতে পারি স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে পড়ে গেলেই হল।“

“বাবা আমাকে একটা ডাবল স্লিপিং ব্যাগ দিয়েছিলেন মনে নেই। ওটাতে দুজনে খুব ভাল হবে। আমি আমার জিনিষ নিয়ে নিচ্ছি আর কোন চিন্তা করতে হবে না।‘

লখুর প্রবেশ।---

একি বৌদি তুমিও কি দাদার সাথে যাচ্ছ? বাহারে। এখানে কিচ্ছু করতে হয় না আর ওখানে গিয়ে উনি একা একা সব কিছু সামলাবেন। দাদা বলত সত্যি কি তুমি যাচ্ছ? না গেলে কি হবে?”

“আরে না। বাবাকে আমি হ্যাঁ বলে দিয়েছি। ইতিমধ্যে নতুন প্রোগ্রামের কথা সবাইকে জানান হয়ে গেছে।“

“বেশ তবে আমিও যাচ্ছি তোমাদের সাথে। উর্মিকে খালি বলে আসছি। আমি আর আলাদা গাড়ী নিচ্ছি না। তোমাদের গাড়ীর সামনের সিটে হয়ে যাবে। আর বৌদি আমি কাবাবমে হাড্ডি হচ্ছিনা, বরং দাদার কাজের সময় তোমাকে পাহারা দেবার স্পেশাল ডিউটি দিতে যাচ্ছি।“

লখুর প্রস্থান। রামু আর সীতা জিনিষ্পত্র গছাতে থাকে।

দশরথের বাড়ীর গেট। রামুর গাড়ী হাজির। রামু আর সীতা দুজনে দুটো ষ্ট্রলী টানতে টানতে আসছে। উপরের জানলা দিয়ে কৌশল্যা দেখছে আর কাঁদছে। পেছন থেকে লখু তার স্ট্রলীটাকে টানতে টানতে প্রায় দৌড় মেরে হাজির। উপরের আর একটা জানলাতে উর্মি কাঁদছে।

লখু ডিকিতে তিনটে স্ট্রলী ভরে দিয়ে পেছনের দরজা খুলে সীতাকে ওঠায়। ওপরের জানলার ওক কোনে সুমিত্রাকে কাঁদতে দেখা যায়। পরে রামু ওঠে, শেষে সামনে দরজা খুলে নিজে ড্রাইভারের পাশে বসে। গাড়ী স্টার্ট নেয়।

দুই ভাই হাত নেরে টা টা করে চলে যায়। ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা স্যাড মিউজিক বাজে, নয়ত কৌশল্যা আর উর্মি দুয়েটে বিচ্ছেদের গান ধরে।

স্ক্রীপ্টের এতটুকু শুনে প্রডিউসার এক লাফ। তার পর একটু নেচে নিয়ে মুশা ভাইকে অর্ডার। “পুরো স্ক্রিপ্ট আপনি লিখবেন। ছবি আগামী মাসে মুহরত হবে। আপনি স্টোরি, স্ক্রিপ্ট, ডিরেকশন দেখছেন। মিউজিকেতে যদি কোন ভুল হয় তবে সেটা আপনি বলে দেবেন। মানে ওভারঅল আপনি সবকিছু।

মুশাভাই আগের স্ক্রিপ্টটা তৈরী করার পরে কেমন জানি ম্যাদামরা হয়ে গেছিলেন। কিছুদিন আই পি এল এ কেচ্ছা পড়ার পরে আবার মাথায় প্লটের কথা গজাতে শুরু করল। এবার বনবাসের যাত্রার পরের অংশে এসে গেলেন।

গাড়ী বেশ কিছু দূর আসার পরে , যখন রাত বেশ গভীর হয়েছে হঠাত গাড়ী হেচকী মেরে থেমে গেল। ড্রাইভার নেমে বনেট তুলে এটা ঠোকে, ওটা টানে। এই করে বেশ কিছুক্ষন বাদে বললে-

“বড়ে ভাইয়া, এ গাড়ী তো জবাব দিয়ে দিল। আমার  নজরে তো কোন কিছু গড়বড় দেখতে পাচ্ছি না। ভাল মেকানিক ডেকে দেখানোর দরকার। মাইল ছয়েক আগে একটা গ্রামে মেকানিকের দোকান দেখেছিলাম, আপনারা গাড়ীতে বসে থাকুন, আমি গিয়ে তাঁকে ধরে নিয়ে আসছি।“

রামুর কথা-  

“যাবিযা, নইলে কি আর করা যাবে। কতক্ষন লাগবে?”

“ তা এখন বাজে রাত আটটা, হেটে যাব, মেকানিক কে ওঠাব। তা প্রায় ঘন্টা চার পাচ লেগে যাবে”।

“যা, আর যত তাড়াতাড়ি পারিস ফিরিস। আমরা নাহয় ততক্ষন গাড়িতেই বিশ্রাম নিচ্ছি।“

ড্রাইভারের প্রস্থান। ক্রমে সন্ধ্যা হয়ে অন্ধকার নেমে আসে।

রামু-

“না দেখছি রাতটা গাড়ীতেই কাটাতে হবে”।

সীতা-

“কি মজা। এখানে রাত কাটাব। কিন্তু আমি ড্রেস ছাড়ব কি করে?”

রামু-

“আমি লখুকে বলে দিচ্ছি ওদিক থেকে একটু ঘুরে আসতে। তাছাড়া তোমার টয়লেটে যাবারও  তো দরকার পড়বে। সেটা এক সাথেই সেরে এস।“

এক এক করে তিন জনই তাদের নাইটড্রেস পরে নিল। আর পরে ডিকি থেকে খাবারের ডাব্বা বার করে ডিনার সেরে নিল।

রামু-

“সীতা, তুমি গাড়ির পেছনের সীটে লম্বা হয়ে যাও। সামনের সীটে আমি আর লখু পালা করে রেস্ট করে নেব। যখন আমি শোব লখু জেগে পাহারা দেবে আর লখু শুলে পরে আমি পাহারা দেব।“

সীতা-

“কেন? আমি কি পাহারা দিতে পারি না।“

লখু-

“বাস, ঐটুকুই বাকী আছে। আধ আলোতে গাছের পাতা নড়ছে দেখে তো ভুত আসছে বলে মনে হবে।“

রামু-

“আর বাহাদুরীতে দরকার নেই। যাও শুয়ে পড়।“

সীতা একবার স্লিপিং ব্যাগে ঢোকার পরে একেবার সকালে উঠল। সারা রাত দুই ভাই নিজের গায়ে থাপ্পড় মেরে মশা তাড়িয়ে সকাল হবার পরে একটু ঝিম মেরেছে।

হঠাত দূরে ব্যান্ড পার্টির আওয়াজ শুনতে পেয়ে চমকে তাকিয়ে দেখে দূরে একটা গাড়ী সাথে কিছু লোকজন আসছে। একটু বাদে ঠাহর হল যে আসছে সে ভুতু (ভরত)। ভুতু একটু কাব্য করে কথা বলে। আসলে বাড়িতে কাউকে না জানিয়ে  পালাগান লেখা  অভ্যেস করছে।

ভুতু-

“দাদা মেজদা, কোথা যাও চলিয়া,

কাদিতেছে অযোধ্যাপুরী ফুলিয়া ফুলিয়া,

যেও নাক পায়ে ধরি,

বউদির চেহারা এ কি হেরি।

কোথা গেল সে পাউডার  চর্চিত মুখশোভা,

এক্ষনে দেখাইতেছে যেন পানা ভরা ডোবা।

হাসিওনা তোমরা সবে,

আমি আসিয়াছি এবে, ফিরাইতে তোমাদের।“

রামু- “ তা হয় নারে ভাই। হ্যারে মেকানিক এনেছিস সাথে?”

ভুতু- 

“মেকানিক আনিয়াছি সাথে, কিন্তু কিবা প্রয়োজন তাহার,

আমার গাড়ী লহ কর ব্যবহার।“

লখু- হ্যাঁরে ভুতু। আসার সময় উর্মীকে বলেছিলাম মান্তুকে পেটানর সুপারীর বন্দোবস্ত করতে। তার কি হয়েছে জানিস। কেউ কি এসেছিল পেটাতে?”

সীতা- “ সুপারী বনে কি হবে। পান কে খাবে।”

ড্রাইভার- “বড়ে ভাইয়া, মেকানিক বলছে আর দুঘন্টার মধ্যে গাড়ি ঠিক করে দেবে। তখন রওয়ানা দিলে দিন থাকতে থাকতে বর্ডারে পৌঁছে যাব। বেলা পাচটার পরে আর বর্ডার ক্রশ করতে দেয়না।“

রামু- ‘ অতি উত্তম। ভুতু, তুই আমাদের সাথে বর্ডার পর্যন্ত চল। অযোধ্যার কথা শুনে নেব। ওখান থেকে তুই ফিরে আসিস। এ গাড়িটাও তো ফেরত যাবে।“

ভুতু-

“ মেজদা তুমি মন দিয়া শোন,

মান্তুকে কেহ পিটায় নাই এখনও,

তবে মা আর বড়মার সাথে মার কথা নাই,

দেখাইতেছে যেন হইয়াছে ঠাই,ঠাই।”

রামু আর সীতার চোখের কোনে জল।

ভুতু-

“বৌদি, সত্য আমি কহিতেছি শোন।

মান্তুকে রাগের চোটে কেহ পিটায় নাই এখনও।

কিন্তু অবিরত গালির ধারায় ভরিতেছে কান,

হয়তো গিয়া দেখিব সে ত্যজিয়াছে প্রান।

অযোধ্যাতে রাত্রকালে জ্বলে নাই আলো,

অন্ধকার, নিষ্প্রদীপ, কুচকুচে কালো।

সরযুর কুল ছাপি গিয়াছে জলে,

এত নয়ন ধারা বহাইতেছে সকলে।

মেজদা হইয়াছ অতি শ্বার্থপর তুমি,

দুঃখের সাথে ইহা জানাইতেছি আমি।

মেজবউদি আমার, তোমার উর্মিমালা,

কাঁদিতে কাঁদিতে তার ধরে গেছে গলা।

কহিয়াছে মোরে যতক্ষন না ফেরে তোমার মেজদা,

করিবনা কোন প্রসাধন যতই না লাগুক ময়লা কাদা।

যাবার সময় সে শেষ দেখিয়াছে এই বসনে মোরে,

বসন বদলাইলে সে যদি চিনিতে না পারে।

সে ফিরিবে কবে তাহা যদি জানিতাম,

তবে এই পরিধান সেই দিনই পরিতাম।

আর ভেবেছ কি কোম্পানীর সি ও র চেয়ারে কে বসবে,

নাকি কম্পানীটাকে লাটে তুলে দেবে।

দাদা নাহয় এসেছে বাবার কথা শুনে,

তুমি ত এসেছ কোন কাজ বিনে

সীতাকে—

“বউদি, বলত দশটি রুটী বানাইতে কত জল লাগে,

কি কি মিশাইতে হয় ঢালিবার আগে।

এর আগে কোনদিন করেছ কি রান্না,

লঙ্কার ঝাঝ লেগে পেয়েছে কি কান্না।

এই সব কাজ তোমার দ্বারা নয়,

সেই জন্যই তো পাচ্ছি আমি ভয়।

হাতপা পোড়াবে কোন একদিন,

এখানের হস্পিটালে নেইকো কেবিন।

ফিরে চল কহিতেছি আমি বারংবার,

এর পরে কি করিবে বিচার তোমার।

আসিয়াছিলাম তোমাদের ফিরাইব ঘরে,

আমি ফিরিয়া গেলে পস্তাইও না পরে।

দাদা এক কাজ কর, দাও কিছু চিনহ,

চেয়ার শূন্য থাকিবে তাহা ভিন্ন।

কাজ কর্ম দেখিব আমি চিনহের নাম লইয়া,

লোকে তাহা মানিবে চিনহ দেখিয়া।

রামু-

“নে তবে এটা”। পকেট থেকে তার আই-পড বার করে দেয়।

ভুতু-

“খুব ভাল চিনহ দাদা,

এটার চেয়ে আউর জাদা,

কি দিতে পার এখন,

বনেতে রয়েছ যখন”।

আই-পড লইয়া ভুতুর প্রত্যাবর্তন। রামু, লখু এবং সীতার বর্ডারের দিকে গমন।

  

 

 
 

৩টি মন্তব্য: