বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

বাংলার ইতিহাস (১ম খন্ড)


আমরা মহাভারতে পড়েছি অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ দেশের কথা, যারা কুরুক্ষত্রের যুদ্ধে পান্ডব বা কৌরবদের পক্ষ নিয়ে লড়েছিল। কিন্তু এই জায়গা গুলো কোথায় ছিল? আমরা মগধ, কৌশালী এই সব রাষ্ট্রের নাম সহজে বুঝে তাদের স্থান নির্দেশ করতে পারি। বঙ্গ দেশ বলতে আমরা বাঙ্গলা দেশ হয়তো মনে করতে পারি কিন্তু তাহলে অঙ্গ দেশ কোথায় ছিল?

আসলে অঙ্গ, বঙ্গ এবং সুমা এই তিনটে রাজ্যের নাম আমরা পাই খৃষ্ট পুর্ব একাদশ শতাব্দীতে, যাতে এদের স্থান নির্দেশ করা হচ্ছে আর্য সভ্যতার সীমানার বাইরে, এবং সেই অনুযায়ী আমরা অঙ্গ রাজ্যকে পাচ্ছি উত্তর বাংলাতে, বঙ্গ রাজ্য কে পাচ্ছি দক্ষিন বাংলাতে এবং সুমা রাজ্যকে পাচ্ছি পশ্চিম বাংলার এলাকাতে। এখানে প্রথমেই একটা কথা মনে রাখা দরকার যে বাংলা বলতে কিন্তু আমি অবিভক্ত বাঙ্গলার কথা সব সময় বলছি।

বৈদিক যুগে আর্যরা এই তিনটি দেশের সাথে আরও একটি দেশের কথা উল্লেখ করেছিলেন যেটি হচ্ছে পুন্ড্র বা পৌণ্ড্র রাজ্য। সেই সময় বলা হচ্ছে যে এই রাজ্য গুলি নিষাদ সম্প্রদায়ের অধীনে এবং আর্যেরা এই সব জায়গাতে এলে পরে ফিরে গিয়ে নিজেদের শুদ্ধিকরণ করতেন। মহাভারতের কথা অনুযায়ী ঋষি উতথ্যের পুত্র ছিলেন দীর্ঘতামস। দীর্ঘতামস এবং রাজা বলীর রানী সুদেষ্ণার তিন পুত্র অঙ্গ, বঙ্গ এবং কলিঙ্গ।  এই তিন জন তিন রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা।
ভাষা হিসাবে এই সব জায়গাতে দ্রাবিড়ীয় ভাষা এবং তিব্বতীয়-বর্মী ভাষার সংমিশ্রণ  ভাষার প্রচলন ছিল। এই সব ভাষার কিছু নিদর্শন আমরা কিন্তু এখনও কোল, ভীল, সাওতালী ভাষার মধ্যে দেখতে পাই।

আবুল ফজলের মতানুযায়ী বঙ্গ দেশের নাম ছিল বাং। তখনকার দিনে রাজত্বের সীমানা নির্ধারণ করে উচু মাটির দেয়াল দিয়ে গিরে রাখা হত যাকে বলা হত আল। আমরা এখনও ক্ষেতের সীমানা নির্ধারনের জন্য এই আলের ব্যবহার করি। বাং শব্দের সাথে আল  শব্দ যোগ করে বাঙ্গাল শব্দ এসেছে , যেটার থেকে বাংলা ভাষা নাম হয়েছে।

এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার মতে বাংলা ভাষা আদি অবস্থাতে ওড়িয়া এবং আসামী ভাষার সাথে একত্রিত বা মিশ্রিত ছিল। তার থেকে প্রথমে ওড়িয়া এবং তার পরে আসামী ভাষা আলাদা হয়ে যায়। এই কারণেই চর্যাপদকে  বাংলার সাথে আসামী এবং ওড়িয়া ভাষাবিদেরা তাদের আদি অবস্থা বলে মেনে নেন।

শ্রী সুনীতি কুমার চ্যাটার্জীর মতে বাংলা মগহী প্রাকৃত থেকে মগহী অপভ্রংশ হিসাবে খৃষ্টীয় দশম শতাব্দীতে উৎপন্ন হয়েছিল। আবার মহম্মদ শাহিদুল্লার মতে খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে গৌড়ীয় ভাষা থেকে উৎপন্ন হায়েছিল।  ব্যকরণগত দিক থেকে যদিও বাংলা ভাষা ইন্দোইউরোপীয় ভাষা, তবুও এর উপরে দ্রাবিড়ীয় এবং তিব্বতী-বর্মী ভাষার প্রভাব সুস্পষ্ট ভাবে পড়েছে।
এবার আমরা দেখতে থাকি একে একে এই রাজ্যগুলির সম্বন্ধে আমরা কি জানতে পেরেছি। প্রথমে আমরা নিচ্ছি পৌণ্ড্র দেশ কে। বর্তমান বাংলা দেশ থেক শুরু করে বর্তমান বিহারের পূর্ণিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এই রাজ্য।
মৎস্য দেশের লোকেদের ধারণা ছিল যে পৌণ্ড্র দেশের লোকেরা ম্লেচ্ছ এবং তারা ক্ষত্রিয় থেকে শূদ্র জাতিতে রূপান্তরিত হয়েছে এবং  বৈদিক সংস্কৃতির বাইরে আছে। মহাভারতে আমরা পৌণ্ড্র রাজা পৌণ্ড্রক বাসুদেবের নাম পাই, যিনি জরাসন্ধের সাথে কৌরবদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন। ইনি কৃষ্ণ বাসুদেবের হাতে মারা যান।

সুমা রাজ্য সম্পর্কে আমরা বিশেষ করে কিছু জানিনা, তবে পান্ডুপুত্র ভীম এবং অর্জুন, সুমা এবং পার্শ্ববর্তী প্রসুমা রাজ্য দুটিকে জয় করেছিলেন। সুমার অবস্থান ছিল উত্তর-পশ্চিম বাংলা এবং বিহারের কিছু অংশ।  

এবার আমরা দেখি অঙ্গ রাজ্য সম্বন্ধে কি জানতে পারা গেছে। অঙ্গ রাজ্যের অবস্থান ছিল বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ, তরাই অঞ্চল, নেপাল এবং ঝাড়খন্ডের সাথে পুর্ব বিহার। বাল্মিকী রামায়ণের বাল কান্ডে বলা হয়েছে যে ইক্ষাকু বশের রাজা দশরথের কন্যা শান্তা কে অঙ্গদেশের রাজা রমাপদ  (একে অনেকে চিত্ররথ নামেও জানেন) দত্তক হিসাবে নেন, এবং ঋষী ঋষ্যশৃঙ্গর সাথে শান্তার বিবাহ হয়। এই ঋষ্যশৃঙ্গ ঋষি পরে রাজা দশরথের পুত্রেষ্ঠি যজ্ঞের পুরোহিত ছিলেন। অবশ্য এর জন্য দশরথের কুলপুরোহিত বশিষ্ঠের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। বৈদিক সংস্কৃতি এই অঙ্গ রাজ্যের সীমানা পর্যন্ত এসেছিল।

মহাভারতে যেখানে কর্ণ রাজা নন বলে অর্জুন তার সাথে শক্তি পরীক্ষায় রাজী হচ্ছেন না সেখানে দুর্যোধন তাঁকে অঙ্গ রাজ্যের রাজা বলে অভিষিক্ত করেছেন।  আবার পরে কর্ণ কে অঙ্গ এবং বঙ্গ দুই রাজ্যের রাজা বলা হয়েছে ।

এবারে আমরা আসি বঙ্গ রাজ্যে। বঙ্গ দেশের নাম কি করে বঙ্গ হল তা নিয়ে কিছু সন্দেহ আছে। কারুর মতে  বোঙ্গা অর্থাৎ সূর্যদেবের পুজারী হিসাবে এখানকার অধিবাসীদের জন্য জায়গার নাম বোঙ্গা থেকে বঙ্গ হয়েছে। আবার কারুর মতে বঙ্গ কথাটা এসেছে ভঙ্গ থেকে। আগেই বলেছি আবুল ফজলের মতে জায়গাটার নাম ছিল বাঙ্গ। বঙ্গ রাজ্য ছিল বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে। এখানকার অধিবাসীদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে এরা সমুদ্রের দক্ষ নাবিক ছিলেন। মহাভারতে  বলা হয়েছে যে এখানকার অধিবাসীরা যুদ্ধে ব্যবহৃত হাতীদের চালানতে দক্ষ ছিলেন।

রামায়ণে বলা হয়েছ যে রাম  অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ জয় করেছিলেন। আবার মহাভারতে অর্জুনের বনবাসের সময় বঙ্গ দেশে আসার কথা বলা আছে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে বঙ্গ দেশ কৌরবদের সাথে যোগ দিয়েছিল।  কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে বঙ্গ দেশের রাজা ভগদত্তর সাথে ঘটোৎকচের যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে যেখানে ভগদত্ত তার পাহাড় প্রমাণ মাপের হাতী দিয়ে দুর্যোধনের রথকে ঘটোৎকচের দৃষ্টির আড়ালে রাখছিলেন।

আবার বঙ্গ দেশের রাজা বিজয় সিংহের খৃষ্ট পুর্ব ৫৪৪ সালে সিংহল জয়ের কথা আমরা মহাবংশতে পাই। শ্যাম মালয়, ইন্দোনেশিয়াতে বঙ্গদেশের অভিযানের কথা আমরা এই সমস্ত আখ্যানে পাই।

খৃষ্ট পুর্ব ষষ্ট এবং পঞ্চম শতাব্দিতে আমরা কিন্তু গঙ্গাঋদ্ধি নামে এক রাজ্যর কথা  দেখতে পাই যেটা ছিল বর্তমান পশিম বঙ্গ এবং বাংলদেশের এলাকাতে। এর উল্লেখ আমরা পাই মেগাস্থিনিসের খৃষ্ট পুর্ব চতুর্থ শতাব্দীর লেখায়। টলেমীর লেখাতে আমরা পাচ্ছি যে গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্য গঙ্গার মোহানাতে অবস্থিত।

 ডক্টর আর সি মজুমদারের লিখিত পুস্তকে ডিওডোরাস সিকুলাসের বৃতান্ত থেকে আমরা জানতে পারি রাজা পুরুর ভাগ্নে আলেক্সান্ডারের আগমনের কথা শুনে রাজ্য ছেড়ে গঙ্গাঋদ্ধিতে পালিয়ে গেছেন এবং আলেক্সান্ডার তার পেছনে তাড়া করেন নি কারন ছিল গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের সৈন্য বলের ক্ষমতা, যাতে  কম করে ৪০০০ হাতী  এবং ২০০০০ অশ্বারোহী সেনা, এবং ২০০০০০ পদাতিক সৈন্য ছিল  এবং রাজ্যের পশ্চিম সীমা দিয়া গঙ্গা নদী ছিল যা আলেক্সান্দারের পক্ষে অতিক্রম করা সহজ বলে মনে হয় নি।

 চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সময় এই গঙ্গাঋদ্ধি বা গঙ্গারদেহি রাজ্য কলিঙ্গ রাজ্যের সাথে এক হয়ে তাদের সাম্রাজ্য চেন্নাই পর্যন্ত বিস্তার করে। কিন্তু এই গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের রাজধানী সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায় নি। অনুমান করা হচ্ছে যে বর্তমান চন্দ্রকেতুগড় ছিল রাজধানী।

এবার আমরা আসছি ইতিহাসের বাংলা দেশের কথায়। সবাই এটা হয়তো মনে করছেন যে উপরের লেখাটুকুর সাথে ইতিহাসের কোন সংস্রব নেই। তা নয়। ইতিহাস একথা মেনেছে যে মহাভারতের যুদ্ধ হয়েছিল এবা তাতে সারা ভারতবর্ষের রাজ্যগুলি বিশেষতঃ দাক্ষিনাত্য বাদ দিয়ে বাকিটা যোগ দিয়েছিল, এবং আলেক্সান্ডার ভারত জয়ে বেড়িয়ে পুর্ব ভারত থেকে ফিরে যান।

বাকীটা পরে লিখছি।…….

 লেখার জন্য ইন্টারনেট, কৃত্তিবাসী রামায়ন এবং কাশীদাসী মহাভারতের সাহায্য নেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

ভারতের ভাগ বাটোয়ারা

ভারতের ভাগ বাটোয়ারা ভাষা বা অর্থনৈতিক দিক থেকে

 দু তিন দিন আগে ভারতের সংসদ এক আইন পাশ করে অন্ধ্র প্রদেশকে দু টুকরো করে তেলেঙ্গানা আর সীমান্ধ্র, দুটি প্রদেশের সৃষ্টি করেছেন। তাই নিয়ে তুমুল হৈ হট্টগোল সংসদে এবং সংসদের বাইরে শুরু হয়েছে। আমার এই  লেখার মুলে এই বক্তব্য আছে , যে প্রয়োজন পড়লে এই ধরনের বিভাজন বা সংযোজন রাজনীতিতে বহুবার হয়েছে আর কিছুদিনের মধ্যে আন্দোলন  স্তিমিত হয়ে পড়েছে। এই  আন্দোলন মূলতঃ ভাষা নিয়ে হয়, যদিও তেলেঙ্গানার ক্ষেত্রে এটা অর্থনৈতিক দিক থেকে হচ্ছে।

ভারতবর্ষে ইসলামী শাসনের আগমনের আগের চেহারা্টা ছিল কতকগুলি ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের সমষ্টি, যারা একে ওপরের বিরুদ্ধে সুযোগ পেলেই রাজ্য বিস্তারের জন্য যুদ্ধ ঘোষনা করতে দ্বিধা বোধ করেনি। এই রাজ্যগুলির ভাষা এবং সংস্কৃতি বিভিন্ন ধরনের ছিল।  মুঘল আমলেই প্রথম ভারতবর্ষকে একটা বিরাট সাম্রাজ্যের চেহারাতে দেখা যায়। তাতে ফার্সী ভাষার উপরে বিশেষ জোড় এল কেননা সেটা রাজভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।

তার পরে বৃটিশ শাসনে  ভারতবর্শ আসার পরে সমস্ত দেশতা এক রাষ্ট্র হিসাবে দেখাতে লাগে যেখানে আঞ্চলিক ভাষা চলতে থাকলেও ইংরাজী ভাষার উপরে জোর দেওয়া হতে লাগল। কিন্তু  রাজ্যের সুশাসনের নামে যখন দরকার মনে হয়েছে তখনই ভারতের অঙ্গরাজ্যের চেহারাগুলোকে পালটান হয়েছে। তখন কিন্তু রাজ্যগুলি থেকে তাদের আপত্তির কোন দাম দেওয়া হয়নি।  এই কথাটি কিন্তু প্রায় প্রত্যেক রাজ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

প্রথমেই দেখি ১৮৫৭ সালে ভারতবর্ষের চেহারাটা। সারা ভারত তখন তিনটি প্রদেশে ভাগ করা আছে, (১) বেঙ্গল প্রেসিডেন্সী, (২) মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সী আর (৩) বম্বে প্রেসিডেন্সী। এছাড়া বাকী রয়ে গেছে করদ রাজ্য সমূহ। বেঙ্গল প্রেসীডেন্সীর বিস্তার ছিল বাংলা থেকে গঙ্গা যমুনার অববাহিকা ধরে দিল্লী পর্যন্ত। বম্বে প্রেসিডেন্সির বিস্তার ছিল বর্তমান ভারতের পশ্চিম ঊপকূল অর্থাৎ গোয়া, কোঙ্কণ উপকূল ধরে সৌরাষ্ট্র পর্যন্ত। আর মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সী ছিল বর্তমান তামিলনাডু, সীমান্ধ্র, ওড়িশা নিয়ে পূর্ব ঊপকূল ধরে।

করদ রাজ্য গুলির মধ্যে মূলতঃ ছিল কাশ্মীরে গোলাবসিং এর রাজত্ব, পাঞ্জাবে শিখ রাজত্ব, মধ্য ভারতে এবং পুর্ব মহারাষ্ট্রে পেশোয়ার রাজত্ব। হায়দ্রাবাদে আসিফ যাইর রাজত্ব। আর দক্ষিণে ট্রাভাঙ্কোর আর টিপু সুলতানের রাজত্ব। এছাড়া রাজপুতানাতে রাজপুতদের বিভিন্ন রাজত্ব।  এ ছাড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেশ কিছু খুচরো রাজ্য, যেমন মধ্য প্রদেশে রতলাম বা উড়িষ্যার কেওঞ্ঝর কিম্বা সৌরাষ্ট্রের জুনাগড় ইত্যাদি। মনে রাখা দরকার ভারতবর্ষ স্বাধীন হবার সময়ে ভারতবর্ষে মোট করদ রাজ্যের সংখ্যা ছিল ৫৬২টি।

আমি প্রথমে নেব আসাম প্রদেশের অবস্থাটা । খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দিতে আসামে রাজত্ব করত অহোম রাজারা আর কোচ বংশের রাজারা।  অহোমেরা ছিল তাই বংশীয় আর কোচেদের উৎপত্তি ছিল বর্মী-ভুটানী সংমিশ্রণে। কোচেদের রাজত্ব ছিল পশ্চিম আসাম, উত্তর বঙ্গ জুড়ে আর অহোমেরা ছিল ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকাতে মূলতঃ; উত্তর আসামে। কিন্তু কোচ সাম্রাজ্যের অবনতির সাথে সাথে তাদের সাম্রাজ্য ভেঙ্গে দু টুকরো হয়ে যায়। পশ্চিম অংশ মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় আর পুর্ব দিকটা অহোম সাম্রাজ্যের  অনুগামী হয়।  মুঘল শাসন কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও আসাম দখল করতে পারেনি।  

কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দির শেষের দিকে  অহোম রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী শ্রীবরগোহাইন এবং অহোম রাজার প্রতিনিধি শ্রীবরফুকনের  মধ্যে বিবাদের পরে অন্য দলকে হারানর জন্য শ্রীবরফুকন, বর্মার (বর্তমান মায়ানমার) রাজার কাছে সাহায্য চায়। বর্মীরা অহোম রাজ্য আক্রমণ করেএবং  বর্মীদের আক্রমণে সমগ্র আসাম বর্মার দখলে আসে।  সাধারণ জনতার উপরে বর্মী অত্যাচারের ফলে তারা বৃটিশ রাজত্বে আশ্রয় নেয়।  যখন এই বর্মীরা ইংরেজ রাজত্বের উপরে আক্রমণ করে তখন ইঙ্গ বর্মা যুদ্ধ বাধে। 

১৮২৪ সালে ইঙ্গ-বর্মী প্রথম যুদ্ধে  বর্মা হেরে গেলে আসামের পশ্চিম ভাগ বৃটিশদের অধীনে আসে। আর এই খন্ডটাকে ১৮৩৮ সালে বাংলার (বেঙ্গল প্রেসীডেন্সির) সাথে জুড়ে দেওয়া হয়।  পরে দ্বিতীয় (১৮৫২) এবং তৃতীয় (১৮৮৫) ইঙ্গ-বর্মী যুদ্ধের পরে সম্পূর্ণ বর্মা বৃটিশদের দখলে আসে এবং সমস্ত আসাম রাজ্য বৃটিশদের কবলে আসে। ১৮৮৬ সাল থেকে সমগ্র আসাম কে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীর অংশ হিসাবে গণ্য করা শুরু হয়। 

১৯০৬ সালে আসাম কে পূর্ব বাংলা এবং আসাম প্রদেশের অঙ্গ হিসাবে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীর থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়।  ১৯৩৭ সালে আসাম কে আলাদা প্রদেশ হিসাবে মান্যতা দেওয়া হয়। এই সময় সমগ্র পূর্বোত্তর ভারতের রাজ্য ছিল আসাম আর করদ রাজ্য ত্রিপুরা এবং মণিপুর।

ভারতবর্ষ স্বাধীন হবার পরে এই অঞ্চলে নাগাল্যান্ড (১৯৬৩), মেঘালয়(১৯৭২), এবং মিজোরাম(১৯৮৭) এর সৃষ্টি করা হয়।  মেঘালয় নামে যে জায়গাটাকে আমরা আজ জানি সেই জায়গাটা (খাসি এবং জয়ন্তী পাহাড় অঞ্চল) বাংলার  সাথে ১৯০৫ সালে জুড়ে দেওয়া হয় কিন্তু বঙ্গ  ভঙ্গ রদ হবার পরে ১৯১২ সালে এই অঞ্চলটাকে বাংলার থেকে আলাদা করে আসামের সাথে যুক্ত করা হয়।  

উত্তর পূর্ব সীমান্ত অঞ্চল (নেফা) কে অরুনাচলে(১৯৭২) রূপান্তরিত করা হয় এবং ১৯৮৭ তে রাজ্যের মর্যাদা লাভ করে।।  ত্রিপুরা এবং মণিপুর ১৯৭২ সালে পুর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পায়।
এখানে আঞ্চলিক ভাষা গুলি আমরা দেখে নি। মেঘালয় অঞ্চলের ভাষা হচ্ছে মূলত খাসী এবং গারো উপজাতির ভাষা। নাগাল্যান্ডের অধিবাসী নাগা উপজাতি এবং প্রত্যেক উপজাতির একটা নিজস্ব ভাষা আছে। বৃটিশেরা যখন ভারত ছেড়ে চলে যায় তখন মিজোরামে প্রায় ২০০ মত মিজো উপজাতি ছিল আর তাদের প্রত্যেকে নিজস্ব স্থানীয় ভাষা ছিল। এটাও ঠিক যে খৃষ্টান ধর্মযাজকদের প্রভাবে মিজো ভাষার (লুসাই ভাষা থেক উতপন্ন) চেয়ে ইংরাজীর প্রচলন বেশী। ত্রিপুরাতে প্রধান ভাষা ছিল ত্রিপুরী কিন্তু বাংলা দেশ থেকে উদ্বাস্তু আগমনের ফলে বাংলাভাষীর সংখ্যা এখন বেশী। মণিপুরে ভাষা মনিপুরী।  আসামে অহমিয়া।


কাজেই আমরা দেখতে পাচ্ছি যে রাজকার্যের সুবিধার জন্য রাজ্যকে ভাগ করে টুকরো করা  হয়েছে। আবার যখন দরকার মনে হয়েছে তখনই মুল রাজ্য থেকে ছোট ছোট উপরাজ্য কেটে বার করে নিয়ে তাদের নতুন রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এখানে একটা ছোট্ট  মানচিত্র দিচ্ছি যাতে ১৯৪৭ সালের আসাম প্রদেশের চেহারাটা দেখা যাবে। মনে রাখা দরকার বর্তমান আসামে কিন্তু অসমীয়া, বাংলা ছাড়া বোরো, সান্তালী ভাষাভাষীদের সংখ্যা প্রচুর  এবং সেই কারণে তাদের আঞ্চলিক স্বাতন্ত্রতার দাবী রয়ে যাচ্ছে।



শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

শেয়ালের বুদ্ধি

বহুকাল আগে এক বনে এক হরিণী ছিল। নধর চেহারা। এক শেয়াল তার মাংস খাবার জন্য খুব ইচ্ছুক ছিল। কিন্তু কি ভাবে হরিণীকে মারা যায়। সে খুব জোরে দৌড়তে পারে, এমন কি সিংহও তাকে সহজে মারতে পারে না। অনেক চিন্তা করে সে এক ইদুরের সাথে সখ্যতা পাতাল। আগেই সিংহের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব ছিল। তিনজনে মিলে প্ল্যান কষতে লাগল। সাথে বাঘ আর বেজীও এসে হাজির।

 শেয়াল বলে সিংহ হরিণীকে তাড়া করুক যাতে সে দৌড়ে দৌড়ে পরিশ্রান্ত হয়ে পরে। তখন নিশ্চয় হরিণী বিশ্রাম নেবার জন্য শুয়ে পড়বে। এবার ইদুর ভায়া গিয়ে দূর থেকে মাটির তলা দিয়ে হরিনীর পায়ের কাছে পৌছবে। পৌঁছানর পরে ইদুর ভায়ার কাজ হচ্ছে হরিণীর পায়ের শিরাতে কামড়ে একটা ক্ষত তৈরী করে দেওয়া। এইবার সিংহ আবার তাঁকে সহজেই তাড়া করে মেরে ফেলতে পারবে।

কথা অনুযায়ী কাজ হল। ইদুর গিয়ে গর্ত থাকে বেরিয়ে হরিণীর পায়ে কামড়ে দিল আর তার পরে সিংহ হরিণীকে সহজেই মেরে ফেলতে পারল। কিন্তু এদিকে শেয়াল মনে মনে ভাবছে কি করে কাউকে ভাগ না দিয়ে সমস্ত মাংস একাই খাওয়া যায়।

সে সবাইকে বলল, দেখ ভাই তোমরা। সাধারণতঃ হরিণীর এই ভাবে মরাটা ঠিক দৈবের প্রভাব ছাড়া হয় না। তাই তোমরা সবাই গিয়ে আগে স্নান করে শুচি হয়ে এস। আমি ততক্ষন এখানে বসে মাংসটাকে পাহারা দিচ্ছি। সবাই কথাটা ঠিক মেনে স্নানে চলে গেল।

সিংহ সব চেয়ে আগে এসে দ্যাখে শেয়াল খুব চিন্তিত অবস্থাতে মাংসের সামনে বসে আছে। সিংহ জিজ্ঞেস করে, কি ব্যাপার? শেয়াল বল্‌ কি বলব ভাই। তুমি যখন স্নান করতে গেছ তখন ইদুর এসেছিল। সে কি তার কথা। বলে, সে হরিণীর পায়ে কেটে আহত না করে দিলে তুমি কি হরিণীকে মারতে পারতে? সিংহ বলে, দুত্তোর,  ইদুরের সাহায্য। আমি সিংহ। আমাকে সবাই ভয় করে। আর ব্যাটা ইদুরের এত আস্পর্ধা ! চাইনা আমি ইদুরের সাহায্য। একাই আমার খাবার জোগাড় করে নিতে পারব। এই মাংসের কনা মাত্র আমার মুখে রুচবে না। আমি চললাম। রেগে সিংহ তো চলে গেল।

এবার স্নান করে এল বাঘ। আসার পরেই শেয়াল তাকে কাছে ডেকে চুপি চুপি বলে,  কি বলব বাঘ ভাই। তুমি কিন্তু একটু সাবধান থেক। সিংহ তোমায় খুঁজে বেরাচ্ছে। বলে আসুক একবার সামনে। দেখিয়ে দেব মজা। আমার সাথে চালাকি। আজ বাঘের একদিন কি আমার একদিন। বলে ঐ দিকে কোথায় তোমাকে খুজতে গেল। বাঘ ভাবে হতেও পারে বা। কিছু বোধ হয় আমার কথাবার্তায় ভুল হয়েছে। তাই এত রাগ। যাকগে আমি তো এখন পালাই। নয়তো মাংস খাবার জন্যে আমার প্রাণ নিয়ে টানাটানি হতে পারে। এই বলে বাঘও মাংস ছেড়ে পালিয়ে গেল


এবার এল ইদুর। ইদুরকে দেখে শেয়াল কাঁদতে শুরু করে দিল। কাঁদতে কাঁদতে বলে দেখ বেজী তো আমাদের সাথে ছিল। সে ইতিমধ্যে  এক সাপের সাথে যুদ্ধ করে হেরে গেছে। আর তার পরে সাপের সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়েছে। দুজনে মিলে এখানে এসেছিল। বলে তুমি এলে তোমাকে ধরে রাখতে। কি জানি কেন? এস, কাছে এস, তোমাকে ধরে রাখি। ইদুর ভাবে সাপ তাকে পেলেই তো খেয়ে নেবে। তার চেয়ে মাংস পরে কোন দিন খাওয়া যাবে। আপাততঃ পালাই, তবেই প্রাণটা বাচবে। এই বলে ইদুরও পালিয়ে গেল।

এবার শেষ কালে এল বেজী। আসতেই শেয়াল তাঁকে বলে, এস লড়াই হয়ে যাক। আমাকে হারাতে পারলে সব মাংসটা তোমার। এই মাত্র তিন জন, সিংহ, বাঘ আর ইদুরকে আমি হারিয়ে দিয়েছি। তারা সব পালিয়েছে , এবার তোমার পালা। বেজী ভাবে আশ্চর্য ব্যপার। তিন তিনজন এত বড় বড় প্রাণিকে শেয়াল হারিয়ে দিতে পারলে আমি তো কোন ছার। আমাকে তো এমনিতেই মেরে ফেলবে। তার চেয়ে বাবা আমি পালাই। বেজিও পালাল। মাংসের আর কোন দাবীদার রইল না। একা শেয়াল সমস্ত মাংসের অধিকার পেয়ে গেল।


 সারমর্মঃ  বুদ্ধি প্রয়োগ করতে পারলে সব কিছুই সম্ভব। শত্রু যদি দুর্বল হয় তবে তাকে দয়া করা আর যখন সে শক্তিশালী, তখন  তাকে যুদ্ধে আহবান করা ঠিক নয়। শত্রু যখন পরাক্রমশালী তখন তাকে বিনয় দেখান উচিত আর সুযোগের অপেক্ষায় থাকা উচিত যাতে কোন এক সময়ে তাকে আঘাত করা যেতে পারে।  


বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

ভ্যালেন্টাইন ডে


এক সপ্তাহ আগে এক ছাগল মনের দুঃখে রাস্তা দিয়ে হাটছে আর ভাবছে এখন কি করা যায়। কদিন বাদেই ভ্যালেন্টাইন ডে আর তার ভ্যালেন্টাইন তো তাকে বলে দিয়েছে তাকে এমন কিছু করে যাতে অন্যের কাছ থেকে বাহবা পাওয়া যেতে পারে, নয়ত তাদের সম্পর্ক শেষ। কিন্তু কি করা যায়।

এমন সময় দেখে একটা সাইনবোর্ডে লেখা আছে-জীবনে সফল হতে গেলে, বাহবা পেতে গেলে এইখানে যোগাযোগ করুনশ্রী রাসভাচার্য, পাতলি গলি, ধোবিতালাও

এদিক ওদিক তাকিয়ে ছাগল সুট করে গলিতে ঢুকে এগিয়ে দেখে এক বুড়ো গাধা, চোখে চশমা লাগিয়ে কিছু তার মত ছাত্র আর কিছু দুপেয়ে জীবেদের ক্লাস নিচ্ছে। তাকে দেখেই জিজ্ঞেস করে বসল-তোমার কি পরবলেম

ছাগল হকচকিয়ে বলেঅ্যাঁ অ্যাঁ স্যার, আমার বান্ধবী আমাকে ছেড়ে চলে যাবে বলেছে যদি না আমি কিছু এমন কাজ করি যাতে বাহবা পাওয়া যায়
গাধা বললে, এই কথা- এর জন্য সোজা উপায় আছে।
যাও গিয়ে একটা ফেসবুক একাউন্ট খোল
শুনতেই ছাগল বলে, আছে স্যার, আমি বান্ধবীর সাথে চ্যাট করি

গাধা বললে,  খুব ভাল এবার গিয়ে সার্চ ফ্রেন্ড অপশন খুলে রোজ পাঁচ জনকে ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট পাঠাও। রিপ্লাই যে কটাই আসুক, আক্সেপ্ট করে দেবে।

তার পরে কিছু ছবি পোষ্ট কর। যেমন তোমরা দুজনে গুতগুতি করছ, কেউ একজন পাতা চিবোচ্ছে, কিম্বা দুটি ছানা লাফালাফি করছে। আর তোমার নিজের, তোমার বাবা আর মার যত ছবি আছে, তাঁর থেকে রোজ তিনটে করে পোষ্ট করবে।

তার সাথে নিউজ ফিডে যত পোষ্ট রোজ দেখবে তার থেকে আদ্ধেকে লাইক বাটনে ক্লিক করে দেবে। ব্যাস দেখবে ১৫ দিনেই তোমার কত লাইক বা বাহবা এসে গেছে।

তুমি কি মনে কর যারা ফেসবুকে লেখে আর পড়ে তারা সব জ্ঞানীগুনী ব্যক্তি। সব তোমার আমার মতই। কাজে কাজে কোন ভয় নেই।


শ্যামু ধোপাজী, এনাকে একটা দু বস্তা পাতার বিল দিয়ে দাও। আর তুমি পনের দিন বাদে এসে পজিশন বলবে।  নেক্সট

ছাগল খুসীমনে বাড়ীর রাস্তা ধরল।


দয়া করে কেউ  কিছু মনে করবেন না।

মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

সমূদ্র মন্থনের কথা

যখন অসুরদের সাথে যুদ্ধে যখন দেবতারা হেরে যান, এবং স্বর্গ রাজ্য থেকে বিতারিত হন, তখন তারা নারায়নের স্তব করতে শুরু করেন। নারায়ণ এসে ব্রহ্মাকে বললেন যে সমুদ্রকে যদি মন্থন করা হয় তবে তার থেকে অমৃত পাওয়া যাবে। সেই অমৃত পান করে সমস্ত দেবতাতাগণ অমর হয়ে যাবে। স্বর্গ রাজ্য পুনরুদ্ধার অচিরা সফল হবে।

তাই যাও, গিয়ে দেবতা আর অসুর মিলে সমুদ্রকে মন্থন কর। তোমরা অসুর দের কি ভাবে ম্যানেজ করবে সেটা ঠিক করে নাও কেননা একা দেবতা গোষ্ঠীর শক্তি নেই সে এই বিরাট কাজটাকে শেষ করতে পারবে। অমৃত পেলে পরে আমি তাঁর ব্যবস্থা করব যাতে তোমরাই সমস্তটা পেতে পার। নারায়নের এই কূটবুদ্ধিযুক্ত  মন্ত্রণা পেয়ে দেবতারা উল্লসিত হলেন আর ঠিক করলেন যে সমূদ্র মন্থনের কাজ শুরু করা হোক।

কিন্তু কি দিয়ে মন্থন করা হবে। আবার নারায়ন বুদ্ধি দিলেন মন্দার পর্বতটাকে নিয়ে গিয়ে সেটাকে দিয়ে মন্থন কর। মন্দার পর্বতের কাছে গিয়ে দেখা গেল সে এক অতি বিশাল পর্বত। এগার হাজার যোজন উচু, তেমনি তার বেড়। তাকে কি করে নড়ান যাবে। সবাই মিলে চেষ্টা করে বিফল হল।

তখন বিষ্ণুর শরণাপন্ন হলে বিষ্ণুর পরামর্শ অনুযায়ী নাগরাজ বাসুকী গিয়ে  মন্দার পর্বতকে উপড়ে নিয়ে এলেন আর সেই পর্বতকে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হল। কিন্তু পর্বত তার নিজের ওজনে সমুদ্রে ডুবে যেতে লাগল। বায়ুকে বলা হল তুমি শক্তিধর আছ, তুমি এটাকে ধরে রাখ। বায়ু বলে মন্দার পর্বত এত মোটা যে আমি তাকে হাতের বেড়ে পাবনা। তাই ধরে রাখতে পারব না। ওদিকে পর্বত তো ক্রমশঃ ডুবে যাচ্ছে।

তখন সমূদ্রেএক কূর্মরাজ থাকতেন। তাকে নানান স্তব করার পরে তিনি রাজী হলে তাঁর উপরে মন্দার পর্বতকে বসান হল। বসানর আগে ইঞ্চ্র অবশ্যি মন্দার পর্বতের তলাত দিকটাকে তাঁর বজ্র দিয়ে সমান করে কেতে দিলান যাতে পর্বতক কূর্মের পিঠে বসান যায়। কিন্তু এই সব দেখে সমূদ্ররাজ বললেন যে এই মন্থনে তো আমার অনেক ক্ষতি হতে পারে। তা আপনার যখন অমৃত পাবেন তখন যেন আমাকেও তাঁর একটু ভাগ দেওয়া হয়।

বাসুকী নাগকে বলা হল, তুমি হবে দড়ি। অসুরেরা বলল সে লেজ নিকৃষ্ট জায়গা অতএব আমরা মুখের দিকটা ধরব। তখন বাসুকির লেজ ধরল দেবতারা আর ফণা ধরল অসুরেরা। টানাটানির চোটে বাসুকির জোর জোর নিঃশ্বাস বার হতে লাগল। তাঁর নিঃশ্বাসের সেই নিঃশ্বাস ধোয়া হয়ে মেঘের সৃষ্টি করল।

মন্থনের চোটে জলে এত আলোড়ন হতে লাগল যে যেখানে যত জলচর ছিল, তারা মারা গেল। পাহাড়ের গাছপালা গুলোতে আগুন লেগে গেল। তখন দেবতারা প্রার্থনা করায় মেঘের থেকে ষ্টি এসে আগুন নিভিয়ে দিল। আর ঘষাঘষির ফলে যে সমস্ত গাছ পিশে যেতে লাগল, তাদের রস জলে পড়ায় জলের প্রানিরা আবার তাদের জীবন ফিরে পেল। এত সব কান্ড করে সবাই ভীষণ পরিশ্রান্ত হল কিন্তু অমৃত পাওয়া গেল না।

ব্রহ্মা তখন আবার বিষ্ণুর শরনাপন্ন হলে বিষ্ণুর বরে আবার সবাই গায়ে জোর পেয়ে মন্থন কাজ শুরু করল। এই বার কিছু কিছু করে সমূদ্র থেকে জিনিষ বার হতে শুরু হোল। কিছুক্ষনের মধ্যে চন্দ্রমা বা চাঁদের উতপত্তি হল, তার পরে এল ঐরাবত, চারটে বিরাট দাঁত, সাদা রঙ, পর্বত প্রমাণ সাইজ। এর পরে এল উচ্চৈশ্রবা ঘোড়া, কাল রঙ। তার পরে পারিজাত পুস্প, তার পরে এলেন ধণ্বন্তরী অমৃতের কলসী কোলে করে। সবাই আরও চাই আরও চাই করে টেনেই যাচ্ছে।
এদিকে সমূদ্ররাজ বরূন দেবতা এসে নালিশ করে বললেন যে সমস্ত জলপুরী তোলপাড় করে যে মন্থন হচ্ছে তাতে তো আমার সব কিছু ধংস হয়ে যাচ্ছে। তখন বিষ্ণু বললেন দুর্বাসার শাপে লক্ষী দেবী তোমার কাছে ছিলেন। এখন যদি লক্ষী দেবীকে নারায়নের কাছে ফেরত পাঠাও তবে তিনি মন্থন বন্ধ করে দেবেন।
এই শুনে সমূদ্ররাজ বরূন তাড়াতাড়ি লক্ষী দেবীকে চতুর্দোলায় চড়িয়ে সমুদ্রে থেকে বার করলেন। নারায়ন লক্ষী দেবীকে পেয়ে গেছেন, অমৃত নিয়ে ধণ্বন্তরিও এসে গেছেন, অতএব নারায়ণ মন্থন বন্ধ করার আজ্ঞা দিলেন। মন্থন বন্ধ হল।

ওদিকে সমস্ত দেবতা আর অসুরেরা সাগর মন্থনে ভাগ নিয়েছে, কিন্তু শিবকে কেউ ডাকেও নি আর কিছু দেবার কথাও বলে নি।। নারদ তাই দেখে শিবের কাছে গিয়ে উপস্থিত। বললেন হে মহাদেব, আপনি কি জানেন যে সমূদ্র মন্থন করে দেবতা আর অসুরেরা যে যা পাচ্ছে তাই নিয়ে নেবার কথা ভাবছে। আপনি কি কিছু পেয়েছেন বা আপনাকে কি কেউ কিছু দিয়েছে?

শিব কিছু বললেন না কিন্তু দেবী ত্রিলোচনা রাগে ক্ষেপে গিয়ে নারদ কে বললেন যে কাকে তুমি এই সব কথা বলছ? এই মহাশয়ের কি এসব দিকে কিছু খেয়াল আছে। ওনাকে কেউ ডাকল কি না তাতে ওনার কিছু এসে যায় না। এই জন্যই আমাকে দক্ষের সভাতে দেহত্যাগ করতে হয়েছিল।

গঞ্জনা শুনে শিব হেঁসে বলেন, যা অন্যেরা চায় না সেটাই তো আমার ভূষণ। দেখনা বাঘের চামড়া কেউ নিল না, তাই সেটা আমার পরিধান। সবাই অগুরু চন্দন ইত্যাদি নিল, তাই ছাইভষ্ম আমার পাউডার, সেই রকম ধুতুরা ফুল, অস্থির মালা এই সবই আমার আভূষন।

দেবী বলেন এই সব তোমার স্তোক বাক্য। ও সব কথা যদি এক গৃহী বলে তবে চলে, তোমার মুখে নয়। তোমাকে অন্য দেবতারা অবহেলা করে বলেই তোমাকে কোন খবর দেয়নি।

এইসব শুনে রাগে শিবের মাথা গরম। সাধে কি আমরা বলি নারদ নারদ। যত ঝগড়া বাধানর মূলে কিন্তু এই দেবতাটি। শিব নন্দীকে বললেন আমার রথ অর্থাৎ ষাড়টাকে সাজাও। আমি যাচ্ছি। কিন্তু কি ভাবে যাচ্ছি। যেন যুদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।

যেখানে যত ভুত প্রেত, যারা শিবের অনুচর, তারা চারদিক থেকে এসে হাজির। সাথে কার্তিক ময়ুরে চড়ে , গনেশ তাঁর ইদুর বাহনে, সাথে নন্দী ভৃঙ্গী, সবাই গিয়ে সাগর পারে হাজির। গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, বলি ব্যপারটা কি হচ্ছে? কি সব সমূদ্র মন্থন না কি সব হচ্ছে। কি ব্যপার? ইন্দ্র বললেন সমুদ্রমন্থন হচ্ছিল, এখন শেষ হয়েছে। নারায়ন আমাদের দিয়ে সমূদ্রমন্থন বন্ধ করিয়ে তাঁর বাড়ি গেছেন।

শিব রেগে বললেন, যে তোমাদের এত আস্পর্ধা, আমাকে কিছু না জানিয়ে মন্থন শেষ করলে। আর যা পেয়েছ, তা সব নিজেরাই নিয়ে নেবে, এটা কি করে হয়। আবার শুরু করা হোক। সব চুপ। কারুর মুখে কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না।
তখন কশ্যপ মুনি বললেন, দেখুন মহাদেব, আগে দুর্বাসা মুনি ইন্দ্রকে একটা মালা দিয়েছিল পড়বার জন্য। কিন্তু ইন্দ্র সেটাকে তাঁর হাতির মাথায় রেখে দেবার পরে হাতী সেটাকে মাটিতে ফেলে দ্যায়। দুর্বাসা মুনি ক্ষেপে গিয়ে শাপ দেন সমস্ত দেবতা দেবিরা তাদের শক্তি হারাবেন আর লক্ষী দেবী সাগরে গিয়ে থাকবেন।

শক্তি হারানর পরে দেবতারা তাদের রাজ্য হারান। পরে তারা নারায়ন কে পুজা করে তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ পান যে সাগর মন্থন করলে তারা তাদের হারান শক্তি ফিরে পাবেন। নারায়ন সাগর মন্থনের আজ্ঞা দিয়েছিলেন, লক্ষী দেবীকে পেয়ে সাগর মন্থন বন্ধ করিয়ে নারায়ণ বাড়ি গেছেন। এখন আপনি আবার বলছেন মন্থন শুরু করতে।

এদিকে সবাই ক্লান্ত, নাগরাজের সমস্ত হাড়গোড় ভেঙ্গে চুরমার, মুখ দিয়ে লালা বেরচ্ছে। বরুন দেবের ঘরবাড়ি সব নষ্ট হয়ে গেছে,  এর পরে আর একবার মন্থন করবার জন্য বলবেন  না, প্লীজ।

শিব বললেন, আমি এসেছি আমার জন্য অন্তত আর একবার সুরু কর। শিবের কথা না মানলে বিপদ তাই আবার শুরু হল। এই বার কিন্তু টানা টানির চোটে নাগরাজের মুখ থেকে বিষ বার হতে শুরু হল। মন্দার পর্বতে ঘষাঘষির ফলে দাবানল জ্বলে উঠল। সব দেবতারা পালাতে শুরু করল।

বিষে সমস্ত চরাচর বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে দেখে দেবতাদের স্তুতিতে তুষ্ট হয়ে শিব এক চুমুকে সেই বিষটাকে নিয়ে নিজের গলাতে রাখলেন, পান করলেন না। তাই থেকে তাঁর নাম হল নীলকন্ঠ।

তখন শিব আদেশ করলেন যে এবার আর মন্থন করে কাজ নেই, মন্দার পর্বত নিয়ে যেখানে ছিল সেখানে নিয়ে গিয়ে রাখ। কারুর আর গায়ে জোর নেই, শেষ পর্যন্ত শিব নিজেই মন্দার পর্বত কে নিয়ে তাঁর জায়গাতে রেখে দিলেন।
কিন্তু যে জিনিষ গুলো মন্থনে বার হল সেগুলোর কি বাটোয়ারা হল।। লক্ষী তো নারায়নের কাছে গেল। রম্ভা, মেনকা, ঊর্বশী এরা সব দেবলোকে গেল। সুরা দেবী অসুরের দিকে গেল। কামধেনু গেল বিষ্ণুর ভাগে। ঐরাবত গেল ইন্দ্রের কাছে আর উচ্চৈঃশ্রবাঃ গেল অসুরদের কাছে। মণিমানিক্যের মধ্যে কৌস্তুভ নিলেন বিষ্ণু। পারিজাত গেল দেবলোকে। চন্দ্র গেল শিবের জটায়। আর অসুরেরা একজোট হয়ে সুধার কলসি নিয়ে নিল।

বিপদ দেখে শিব বলে ঝগড়া করবে না আমি ঠিক করছি। ইতিমধ্যে নারায়ন মেয়ে সেজে এসে হাজির। তাঁর কি সে রূপ। ঐ রূপলাবণ্যে সবাই মোহিত। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া থামিয়ে সবাই সেই মোহিনী রূপ দেখতে লাগলো।

সুযোগ বুঝে গরুড় এসে অমৃতের কলসী নিয়ে পালাল। যাবার পথে কলসি থেকে চার ফোঁটা অমৃত পৃথিবীতে পড়ে যায়। সেই চার জায়গাতে এখন কুম্ভ মেলা হয়। এ দিকে মোহিনীবেশী নারায়ণ গরুড়ের কাছ থেকে অমৃত নিয়ে বিলি করবার জন্য সবাইকে লাইন দিয়ে বসালেন। 
তাঁর পরে প্রথমে দেবতাদের দিক থেকে অমৃত পান করানো শুরু করলেন। অসুরেরা দেখল যে দেবতারা সব অমৃত আগে পান করে নিলে তাদের ভাগে কিছুই থাকবে না, আর নারায়ন খেয়াল রাখছিলেন যেন কেউ লাইন না ভেঙ্গে আগে ঢুকে আসে।  কিন্তু রাহুকেতু নামে এক অসুর দেবতাদের মধ্যে গিয়ে লুকিয়ে দেবতা সেজে অমৃত খেয়ে নেয়। সুর্য আর চন্দ্র সেটা দেখতে পায়। নারায়ন তখন তাদের গলা কেটে দিতে রাহু আর কেতু আলাদা হয়ে দু টুকরো হয়ে যায়। কিন্তু অমৃত খাবার ফলে তাদের মৃত্যু হয় না, তারা আকাশে ঘুরে বেড়াতে থাকে। আর সেদিন থেকে রাহু আর কেতুর সাথে স্যররয আর চন্দ্রের শত্রুতা, এরা সুর্য আর চন্দ্রকে দেখতে পেলেই খেয়ে নেয় কিন্তু গলা কাতা থাকাতে তাদের আর হজম করতে পারেনা।


ব্যাসদেব রচিত মহাভারতের শ্রীকাশীরাম দাসের বাংলা অনুবাদ এবং শ্রী রাজশেখর বসুর সারানুবাদ অবলম্বনে লেখা। 

সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

গঙ্গার কাহিনী

গঙ্গার কাহিনী

গঙ্গা ভারতবর্ষের এক প্রধান নদী, সুদূর হিমালয় থেকে বেরিয়ে উত্তরাখন্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খন্ড, পশ্চিম বঙ্গ হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। দৃষ্টিগোচর ভাবে গোমুখে এর উৎপত্তি আর সাগর দ্বীপের কাছে এর অন্ত। ভারতের এই প্রধান নদী নিয়ে অনেক পৌরাণিক কথা প্রচলিত আছে। গঙ্গাকে মনে করা হয় পাবন সলিলা, এর জলে সব পাপ ধুয়ে যায়।

একটিমতে গঙ্গা, লক্ষী আর সরস্বতী তিনজনে ছিলেন বিষ্ণুর স্ত্রী। তারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করতে থাকতেন। বিরক্ত হয়ে বিষ্ণু তাদের আলাদা করে দেবার সিদ্ধান্ত নেন। নিজে লক্ষীকে রাখেন, গঙ্গা যায় শিবের ভাগ্যে আর সরস্বতী যায় ব্রহ্মার ভাগ্যে।

অন্যমতে বিষ্ণু বামন অবতার হিসাবে অসুরদের রাজা মহাবলির যজ্ঞস্থলে যান। পৃথিবীর মাপ নেবার জন্য তাঁর বাঁ পা বাড়িয়ে বুড়ো আঙুল দিয়ে যখন দেখছিলেন যে কোথায় মর্ত্য শেষ হয়েছে, তখন ত্রিলোকের উপরে যে আবরণ ছিল সেটাতে ফুটো হয়ে যায় আর ব্রহ্মসাগরের জল উপচে উপরে উঠে আসে। এই জলধারাই হচ্ছে গঙ্গা। বলা হয় ভগীরথের অনুরধে গঙ্গার মর্ত্যে অবতরণ হয়।

কিন্তু কেন তিনি মর্ত্যে এলেন। এই সম্বন্ধে দুটি কথার প্রচলন আছে। প্রথমটি রাজা শান্তণু কে নিয়ে আর দ্বিতীয়টি সাগরের বংশধর ভগীরথ কে নিয়ে। আমরা প্রথমে ভগীরথের কাহিনী দেখি।

রাজা সাগর ঠিক করলেন যে তিনি অশ্বমেধ যজ্ঞ করবেন। নিয়ম অনুযায়ী ঘোড়া ছেড়ে দেওয়া হল। সব যায়গা থেকে ঘোড়া বশ্যতা স্বীকার করিয়ে ফিরে এল। এবার ঘোড়া চলে গেছে পাতাল পুরীতে। আর ফেরেনা।

সাগর রাজার ষাট হাজার ছেলে ঘোড়া খুজতে খুজতে পাতালে গিয়ে দেখে মহামুনি কপিল বসে ধ্যান করছেন আর তাঁর পাশেই অশ্বমেধের ঘোড়া দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেরা রেগে গিয়ে কপিল মুনিকে গালি গালাজ করাতে, কপিল মুনি ধ্যান ভঙ্গ হবার রাগে একবার এই ষাট হাজার ছেলের দিকে তাকান আর তারা পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

কালক্রমে এদের বংশধর রাজা দিলীপের পুত্র ভগীরথ দেখে তাঁর ঐ ষাট হাজার পুর্বপুরুষ পারলৌকিক ক্রিয়া হয়নি বলে ভুত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভগীরথ ঠিক করে সে এদের উদ্ধার করবে।

ভগীরথ চলে যায় ব্রহ্মার কাছে। বলে যদি গঙ্গার জলধারা দিয়ে তাদের পুর্বপুরুষের ভস্মকে ধোয়া যায় তবে তারা মুক্তি পাবে। অতএব হে ব্রহ্মা, দয়া করে গঙ্গাকে মর্ত্যে আসতে বলুন।

নানান স্তব স্তুতির পরে ব্রহ্মা প্রসন্ন হয়ে গঙ্গাকে বললেন, যাও তুমি, মর্ত্য হয়ে পাতালে গিয়ে এদের উদ্ধার কর। ভগীরথ খুসি হয়ে গঙ্গাকে বলে সোজা পাতালে গেলেই তারাতাড়ি হবে। গঙ্গা ভাবে তাকে পাতালে যেতে বলে অপমান করা হচ্ছে। সে পুর্ণ বেগে মর্ত্যে নামার জন্য তৈরি হয়।

গঙ্গার এই পুর্ণ বেগ যদি পৃথিবীতে সোজা নামত, তবে সমস্ত পৃথিবী ধংস হয়ে যেত, তাই ভগীরথ গিয়ে শিবের শরণাপন্ন হয়। শিব গঙ্গাকে বলে, প্রথমে তুমি আমার মাথার উপরে নাম, তার পরে সেখান থেকে মর্তে নামবে। গঙ্গা তাই করে আর নামামাত্রই শিব তাঁর চুল দিয়ে জটা বানিয়ে গঙ্গাকে তাতে আটকে ফেলে। তাঁর পরে অল্প অল্প করে ছাড়তে থাকে। পৃথিবী ধংসের হাত থেকে বেঁচে যায়।

ভগীরথ গঙ্গাকে রাস্তা দেখিয়ে পাতাল পূরীতে নিয়ে গিয়ে তাঁর পূর্বপুরুষদের উদ্ধার করেন।  মকর সংক্রান্তির দিন এই পুর্বপুরুষের উদ্ধারের স্মৃতি নিয়ে গঙ্গাসাগর স্নান হয়।


দ্বিতীয় কাহিনীটি রাজা শান্তনুকে নিয়ে। ইক্ষাকু বংশের রাজা মহাভিষ তাঁর নিজের পুন্যের ফলে স্বর্গে গিয়েছিলেন। একদিন যখন ব্রহ্মা ধ্যান করছেন আর  সবাই সামনে বসে আছেন তখন গঙ্গা ব্রহ্মার সাথে দেখা করতে আসেন। খুব জোরে বাতাস বইছিল আর সেই কারনে গঙ্গার কাপড় অস্তব্যস্ত হয়ে দেহশোভা দেখা যাচ্ছিল।

সবাই লজ্জায় মাটির দিকে তাকিয়ে থাকেন কিন্তু রাজা মহাভিষ গঙ্গার দিকে নির্নিমেশ তাকিয়ে তাকে দেখতে থাকেন। মহাভিষ দেখতে অপূর্ন সুন্দর ছিলেন তাই গঙ্গাও তাঁর দিকে চেয়ে থাকেন। তাদের দুজনে এই আচরণ স্বর্গের স্বাভাবিক আচরণ বলে গন্য না হওয়াতে দুজনকে অভিশাপ দেওয়া হয় যে তাঁর মর্ত্যে জন্মাবেন আর একে অপরকে বিবাহ করবেন।

মহাভিষ মর্ত্যে প্রতীপের পুত্র শান্তনূ হিসাবে জন্মান। ওদিকে গঙ্গা ফিরে আসার সময় রাস্তাতে অষ্টবসুদের সাথে দেখা হয়। বশিষ্ট মুনির সুরভী গাই চুরি করার জন্য তাদের বশিষ্ট শাপ দেন সে তারা মর্ত্যলোকে জন্ম নেবেন। অষ্টবসু (আট জন বসু) শাপভয়ে গঙ্গাকে বলেন তুমি যদি আমাদের মাতা হও তবে আমরা সহজেই এর থেকে মুক্তি পেতে পারি। গঙ্গা নিজে এদের মুক্তির উপায় স্থির করে নিয়ে সম্মতি দেন। 

এদিকে রাজা শান্তনু শিকারে গিয়ে গঙ্গার দেখা পান। গঙ্গাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলে গঙ্গা সম্মতি দ্যায়। কিন্তু এক সর্ত আরোপ করে। বলে যে গঙ্গা যাই করুক না কেন তাঁর কোন রকম প্রতিবাদ বা কারণ জিজ্ঞাসা করা চলবে না। যদি করেন তবে গঙ্গা তখনই শান্তণুকে ছেড়ে চলে যাবে।। শান্তনু রাজি হয়।

বিয়ে হয়ে যায়। দিন যায়। গঙ্গার প্রথম পুত্র হয়। শান্তনূ খুসী কিন্তু গঙ্গা তাঁর পুত্রকে নিয়ে নদীতে গিয়ে ভাসিয়ে দেয়। শান্তনু দু;খ পায় কিন্তু বিয়ের আগে গঙ্গাকে দেওয়া অঙ্গীকার মনে করে কিছু বলে না। এক এক করে পর পর সাত পুত্রকে এই ভাবে গঙ্গা জলে ভাসিয়ে দ্যায়।

যখন অষ্টম পুত্রকে নিয়ে গঙ্গা জলে ভাসাতে যাচ্ছে তখন শান্তনু আর থাকতে পারে না, সে গঙ্গাকে আটকায়। বলে তোমার মত নিষ্ঠুর মা আমি আর দেখিনি। এই ছেলে কে কেন ভাসিয়ে দেবে?।

গঙ্গা বলে আমার কাছে দেওয়া অঙ্গীকার তোমার নিশ্চয় মনে আছে। আমার কাজে তুমি বাধা দিয়েছে তাই আমি তোমায় ছেড়ে চললাম। এই ছেলেকে তুমি নাও ভাল করে মানুষ কর। বিরাট বীর আর ধার্মিক হবে।

এরা সব শাপ পেয়ে মর্ত্য লোকে জন্ম নেওয়া বসুগণ। এই সেই অষ্টম বসু যে সুরভিকে চুরি করেছিল তাই একে মর্ত্যলোকে থাকতে হবে আর বাকী সাতজন ছিল চুরির ব্যপারে সহযোগী মাত্র তাই তারা জন্ম নেবার পর তাদের মৃত্যু হয়েছে আর তাদের শাপের সময় তাতেই শেষ হয়ে গেছে,। এই বলে গঙ্গা অদৃশ্য হয়। শান্তনূ ছেলেকে নিয়ে ফিরে আসে। এই ছেলের নাম দেবব্রত, যিনি পরে ভীষ্ম নামে পরিচিত হন।


এই পরে কি হয় সেটুকু পরে আবার কোন দিন লেখা যাবে।

রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

অর্ডারমাফিক কবিতা লেখা


ভাইরা সব শোন না কথাটা আমার

শুদ্ধ বাংলাতে লেখা আজকাল কঠিন ব্যপার

চলন্তিকা, অভিধানের বালাই যে ঘরেতে নেই

বাংলা পড়াও ছেড়েছি সেই সত্তর সালের পরেই,

তার আগে অবশ্য গিন্নীর চিঠিপত্র পেতাম 

রঙ্গীন সুগন্ধী কাগজে তার উত্তরও দিতাম।

তার পরে যাও একটু  অন্য চিঠি পত্র পেয়েছি 

সব কটার না হলেও দু একটার উত্তরও দিয়েছি।

কিন্তু তার ভাষাটা ছিল এক্কেরে অসাধু

(মানে কথ্য ভাষা, যা সাধু নয়)

তার ভুলচুক লেনাদেনা মানত না খালি মধু

মধু ছিল টিচার, গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে

বাংলা পড়াত আর দিত কানটা মুলে

(অবশ্যই বানান ভুলে হলে পরে)

মাঝে মাঝে ভয় হত বুড়ো বয়সেও আমার

কেননা কান মোলার পারমিশন ছিল আমার বড় মামার।

যাকগে ওসব বাজে কথা, শোন মন দিয়ে এবার

লিখব যখন অর্ডার দিয়েছ কবিতা লেখার

কিন্তু লেখা আমার ছোট হবে, ভুলভালও থাকতে পারে

মেনে নিও সেটা কিন্তু, দিওনা ছিঁড়ে ফেলে দূরে।।

কবিতাটা অর্কুটে একটু অন্য ভাবে প্রকাশ হয়েছিল। ছন্দের কিছু রদবদল করে এখানে দিলাম।