রবিবার, ১ মার্চ, ২০১৫

আন তিয়েমের তরমুজ (ভিয়েতনামের রূপকথা)


অনেক দিন আগে ভিয়েতনামে হুং ভং নামে এক দয়ালু রাজা ছিলেন। তার একটাও ছেলে ছিল না। খালি একটাই মেয়ে। কি আর করে, ঠিক করে নিল যে একজন ছেলেকে দত্তক নেবে। দূরদেশ থেকে এক ছেলেকে সে দত্তক নিল। ছেলের নাম ছিল আন তিয়েম। ধীরে ধীরে আন তিয়েম বড় হয় আর সব দিক দিয়ে চৌখস ছেলে হয়ে ওঠে। যেমন বুদ্ধি তেমনি তার বিচার। রাজা মশাই খুব খুশী। কিন্তু তার মেয়েকেও তিনি কাছছাড়া করতে রাজী নন, তাই ঠিক করলেন যে আন তিয়েমের সাথে তার নিজের যে মেয়ে ছিল তার বিয়ে দিয়ে দেবেন। রাজামশাই চেয়েছেন আর বিয়ে হবে না? বিয়ে মহা ধুমধামের সাথে হয়ে গেল, আর তার পরে দুজনে মহা সুখেই দিন কাঁটাতে লাগল। কিন্তু রাজসভাতে কিছু না কিছু বদ লোক থাকবেই। তারা এই দুজনের নামে মিথ্যে মিথ্যে গুজব রটাতে শুরু করে দিল। কেননা তারাতো আর এঁদের ভাল চায় না। ক্রমে রাজামশাই এই সব গুজব শুনতে পেলেন। ভাবতে থাকেন তবে কি এগুলো সত্যি। তার মেয়েই তার বিরুদ্ধে যেতে চাইছে। আর আন তিয়েম, যাকে তিনি নিজের ছেলের মতন করে ভালবেসে ছিলেন সেও ঐ দলে আছে। বিশ্বাস হচ্ছেনা, কিন্তু তবু হলেও হতে পারে। তাহলে কি করা যায়। ঠিক করলেন আন তিয়েমকে নির্বাসন দেওয়া হোক। কোথায়, না বহুদূরের কোন এক নির্জন দ্বীপে। কবে যে নির্বাসনের সাজা মকুব হবে তা কজেউ জানে না।আন তিয়েমও কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিল না যে সে কোনদিন বেঁচে ফিরতে পারবে। আর ওদিকে আন তিয়েমের স্ত্রী মানে রাজামশাইয়ের মেয়ে যখন দ্বীপে গিয়ে সেই হুহু করে বয়ে যাওয়া ঝোড়ো হাওয়া দেখল আর তার ঝাপটা গায়ে অনুভব করল, সে তো কেঁদেই ফেলল। কি করে এই রকম জায়গাতে তারা থাকবে। কোন লোকজন নেই সাহায্য করার মতন কাউকে কোথাও পাওয়া যাবে না। ভেবে কি লাভ, যাকগে কি আর করা যাবে। কোন রকমে তার নিজেদের ধীরে ধীরে ওখানে থাকার জন্য তৈরী করে নিতে শুরু করল। একদিন আন তিয়েন সমূদ্রের পাড়ে দেখে কয়েকটা হলুদ রঙের পাখী ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাখীগুলোকে সে চেনে না, তাই ভাল করে দেখবার জন্য সে একটা উচু পাথরের উপর থেকে নজর রাখতে লাগল। দেখতে পেল যে কিছু কাল রঙের বিচি ওখানে পড়ে আছে আর পাখীগুলো তাতে ঠোকর মারছে আর খেয়ে নিচ্ছে। আন তিয়েম ঠিক করে নিল এই বীজগুলো নিয়ে সে কোথাও পুঁতে দেবে। তাতে তার তো ক্ষতি তো কিছু হবে না। আন তিয়েম তার বউকে বলল, “দেখ এই বিচীগুলো পাখী খাচ্ছিল। তারা যদি খেতে পারে তবে এর ফল আমরাও খেতে পারব”। পুঁতে দেবার কিছুদিন বাদেই দেখল যে বীজগুলো থেকে লতার মত গাছ হয়েছে, তাতে প্রথমে কুড়ি এল তার পরে ফুলও এল। আর সব শেষ এল ফল। গোল গোল ফল ক্রমে বড় হয়। দেখতে দেখতে সেই ফলগুলো তাঁদের মাথার মাপের চেয়ে বড় হয়ে উঠল, সবুজ রঙের গা, বেশ হাত বোলালে মসৃণ লাগে। ফলগুলোর থেকে সুন্দর গন্ধ বার হচ্ছে দেখে একদিন আন তিয়েম একটা ফল কেটে নিয়ে খাবার জন্য বাইরের খোলাটা ছাড়াল। ভেতরে লাল রঙ। আর কি মিষ্টি খেতে । ফলটার নাম আন তিয়েম দিল “দুয়া দু”। কিন্তু আন তিয়েমের বৌ বলে, শোন শোন পাখীগুলো কি বলছে। আন তিয়েম পাখীর ডাক শুনে বলল, ওরা তো বলছে “তে কুয়া, তে কুয়া”। দুজনে মিলে ফল গুলোকে খতে লাগল কিন্তু ফলের বীজ গুলোকে তুলে রাখল যাতে নষ্ট না হয়। এই প্রথম তারা ‘তে কুয়া’ মানে তরমুজ খেল। পরের বছর সেই বীজগুলো পুতে আরও তরমুজ হল, এমন করে প্রচুর তরমুজ হলে পরে, আন তিয়েম বুদ্ধি করে দ্বীপের কাছ দিয়ে যে সমস্ত জাহাজ যেত, তাদের নাবিকদের কাছে ঐ তরমুজ বিক্রী করে তার বদলে তাঁদের যা যা দরকার তাই নিতে লাগল। তাঁদের আর কোন কষ্ট রইল না। একদিন আন তিয়েমের মাথায় একটা বুদ্ধি আচমকা এল। সে কিছু তরমুজের গায়ে তার নাম খোদাই করা সমূদ্রের জলে ভাসিয়ে দিল। তরমুজগুলো ভাসতে ভাসতে গিয়ে পৌছল রাজা মশাইয়ের দেশে। সেখান কার লোকেরা নতুন ধরণে কিছু সমূদ্রে ভাসছে দেখে তুলে নিয়ে এসে রাজামশাইয়ের কাছে হাজির। রাজামশাই দেখলেন ফলের গায়ে লেখা আছে আন তিয়েম। রাজামশাই চেচিয়ে উঠলেন আরে এটাতে তো আন তিয়েমের নাম লেখা আছে। তাহলে আন তিয়েম এখনো বেচে আছে। লোক পাঠিয়ে আন তিয়েমকে আর তার বউকে দেশে ফেরত নিয়ে আসা হল। সবাই সুখে থাকতে লাগল।

from Spicydilip http://ift.tt/1wYA6xU

via IFTTT

1 টি মন্তব্য: