সোমবার, ৯ মার্চ, ২০১৫

বাদরের বাঁদরামো (সাওতালী উপকথা)

একটা সময়ের কথা বলছি যখন এক বাগানে অনেক রকমের ফল নিজের থেকেই হত আর জঙ্গলের সমস্ত জন্তু জানোয়ারেরা মনের সুখে সেগুলো খেতে পারত। কিন্তু সেটা তারা পারত একটা শর্তে। তাঁদের গিয়ে ঐ গাছের কাছে নমস্কার করে, মাথা ঝুকিয়ে বলতে হত, “ হে অমুক গাছ, আপনি কি আমাকে দয়া করে আপনার ফলের একটু স্বাদ নিতে দেবেন”। 
খেয়াল রাখতে হত যে, তারা গাছের নাম ঠিক করে বলছে, আর ঐ দয়া করে কথাটা অতি অবশ্যই বলেছে। এটাও মনে রাখতে হত যে হ্যাংলামো করে অনেক ফল পেড়ে নিয়ে নষ্ট যেন না করা হয়। তাঁদের আম খাবার ইচ্ছে হলে আম গাছের কাছে গিয়ে বলতে হত, “ ও ভাই আম গাছে , তুমি কি দয়া করে একটা আম আমাকে খেতে দেবে”। বাস। অমনি আমগাছ থেকে একটা ভাল দেখে পাকা মিষ্টি আম, তার সামনে পড়ত, আর সেটা সে খেতে পারত। 
এখন সেই বাগানের এক পাশে একটা সুন্দর দেখতে গাছ ছিল, আর তাতে সুন্দর সুন্দর দেখতে কিছু ফল হয়েছিল। কিন্তু সেই ফল কেউই খায় নি। কেন না ঐ গাছটার নামই তো কেউ জানত না। আর নাম না জানলে গাছটাকে কি নামে ডাকা হবে। 
ঐ বাগানেরই এক পাশে একটা ছোট্ট কুড়েঘরে এক বুড়ী থাকত। যদি কোন জানোয়ার কোন গাছের নাম না মনে করতে পারত, তবে তার কাছে গিয়ে জেনে আসত। বাগানে যত গাছ ছিল বুড়ী তাঁদের সব গাছগুলোর নাম জানত। এই গাছের নামও বুড়ি জানত। হলে কি হবে, গাছের নামটা এত লম্বা আর খটমট যে জানোয়ারেরা ঐ নামটা শুনে সেই বুড়ির বাড়ি থেকে গাছ পর্যন্ত আসতে আসতেই নাম ভুলে যেত আর গাছের কাছে ফল চাওয়া হত না।  ঐ বাগানে একটা বাঁদর থাকত। সেই বাঁদর আবার গীটার বাজিয়ে গানও গাইত। জন্তু জানোয়ারেরা তার গান শুনতে খুব ভালবাসত। এইবার সেই বাঁদরের ইচ্ছে হল যে ঐ নাম না জানা গাছের ফল খায়। গেল সে বুড়ীর কাছে গীটার বগলে করে। আর বুড়ীর কাছে ঐ গাছটার নামও জেনে নিল, তার পরে সেই নামটাকে নিয়ে একটা গান বানিয়ে ফেলল। গীটার বাজায় আর সেই গানটা গায়, যাতে নামটা না ভুলে যায়। জন্তু জানোয়ারেরা জিজ্ঞেস করে এটা আবার কি গান গাইছে। কিন্তু বাঁদর কোন উত্তর দ্যায় না খালি গেয়ে চলে আর সেই গাছটার দিকে হেটে। 
গিয়ে পৌঁছল সেই গাছের কাছে। কি রকম সুন্দর ফলটা দেখতে। সে কোন রকমে এটুকু মনে রেখেছিল তাঁকে নামটা দুবার বলতে হবে আর দয়া কোরে এই কথাটাও যেন বলা হয়। বাঁদর সে কথা একেবারে ভোলে নি। তাই ঠিক মত বলে দিতেই গাছ তার একটা ফল বাঁদরের সামনে দিয়ে দিল। বাঁদর সেটাকে তুলেই এক কামড়। আর তার পর ওয়াক ওয়াক থু থু।, কি বিচ্ছিরী খেতে রে বাবা। ফলের বাকীটা সে ছুঁড়ে প্রায় বাগানের বাইরে ফেলে ছিল। কিন্তু বাঁদরের বাঁদড়ামো এবার সুরু হল। সে ভাবে একা সে কেন এই বাজে স্বাদের ফল খাবার শাস্তি পায়।
 তার পর থেকে কোন না কোন জানোয়ারকে ধরে তাঁকে ঐ সুন্দর দেখতে ফলটা খাওয়াত। আর তারা যখন সেই বিশ্রী ফলটা খেয়ে মুখ ব্যাঁকাত তখন বাঁদর খুব মজা পেত। সেটাই তার বাঁদরামো ছিল।

from Spicydilip http://ift.tt/1wYA6xU

via IFTTT


1 টি মন্তব্য: